নিউজ ডেস্ক: চলমান জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণকে মাঠে নামানোর উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সরকারের প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এই রাজনৈতিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ইতোমধ্যেই চলমান জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিয়েছে। সোমবার (১১ জুলাই) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ১৪ দলের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রতিরোধ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
বিকেল ৩টায় আয়োজিত এ সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে ১৪ দল।
কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচির পাশাপাশি জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়েও কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। গঠন করা হবে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি। সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে এই কমিটিতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে রাখা হবে।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা এবং ঈদেও দিন শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় সরকার উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। এই পরিস্থিতি বন্ধে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ ও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনিক তৎপরতার পাশাপাশি রাজনৈতিক তৎপরতার উপরও গুরুত্ব দিচ্ছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একের পর এক এই হামলা, গুপ্তহত্যা ও টার্গেট কিলিংয়ে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগও চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। এটা বন্ধে সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে যে কঠোর অবস্থান নিয়ে মাঠে নামিয়েছে তা আরও জোরদার করা হবে। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর নেতৃত্বাধীন ১৪ দলকেও মাঠে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা আরও জানান, এর আগে গত বছরের শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের টানা হরতাল-অবরোধে রাস্তায় বাসসহ যানবাহনে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হয়। টানা ৯২ দিন ওই অবরোধ চলাকালে পেট্রোল বোমায় দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে জনগণকে সংগঠিত করেন। তখন ওই পেট্রোল বোমার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠলে তা বন্ধ হয়। একইভাবে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে এর বিরুদ্ধেও গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। এ জন্য গণজাগরণ তৈরি উপর জোর দেয়া হচ্ছে।
সোমবারের সমাবেশ সফল করতে রোববার (১০ জুলাই) আয়োজিত এক প্রস্তুতি সভায় ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে-এই হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশকে নিয়ে দেশী-বিদেশি চক্রান্ত। তাই দেশের প্রয়োজনে বিএনপি-জামায়াততে রুখে দাঁড়াতে হবে। এই দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করতে হবে। একাত্তরেও আমরা দানবীয় শক্তিতে পরাজিত করেছি মানুষের শক্তি দিয়ে।
তাই আগামীকালের (সোমবার) সমাবেশে লাখ লাখ মানুষের সমাগমের মাধ্যমে বিশ্বাবাসীকে দেখিয়ে দিতে হবে বাংলার জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধ আছে, তার পক্ষেই আছে।
ওই সমাবেশের পাশাপাশি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সারা দেশে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গত ৩ জুলাই ১৪ দলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১২ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী এ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিতে শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী, ইমাম, পুরোহিত, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ সর্বস্তরের শ্রেণী-পেশার মানুষকে নেয়া হবে।
এছাড়া আগামী ২৪ জুলাই থেকে সারা দেশে সাত দিনব্যাপী সমাবেশ করবে ১৪ দল। এই সব কর্মসূচিতে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও অংশ নেবেন।বাংলানিউজ
পাঠকের মতামত